এবারের বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত খেলা দেখছেন নিশ্চয়ই। কীভাবে প্রতিটি ম্যাচে অপ্রতিরোধ্যভাবে খেলে গিয়েছেন। তাই না? আপনি অবশ্যই ভাবতে পারেন স্বাস্থ্য বিষয়ক ব্লগে প্রথমেই কেন উনার কথা বললাম। এ উত্তর দেয়ার আগে আপনাদের একটি প্রশ্ন করতে চাই, আপনাদের মনে কি কখনো প্রশ্ন জেগেছে কীভাবে সাকিব আল হাসানের মতন খেলোয়াড়েরা এই পর্যায়ে এসেছে? হয়তো ভাবছেন ভালো কোচের সান্নিধ্যে, প্রতিদিন বেশি বেশি অনুশীলন, নতুন টেকনিক আয়ত্ত এমন কিছু? আসলে এর কোনোটি নয়। সাকিব আল হাসান এক সাক্ষাতকারে বলেছেন যে তাঁর ফিটনেসের পিছনে পরিশ্রমই তার মধ্যে দৃঢ় মনোবল জাগিয়েছে এবং ভালো খেলার শক্তি দিচ্ছে। তিনি আলাদা করে কোনো কৌশল শিখেননি বরং ফিটনেসের জন্য এতো পরিশ্রম করেছেন যে তাঁর মানসিক শক্তি বেড়ে গিয়েছে বহুগুণে। আর মানুষের মানসিক শক্তি বেড়ে গেলে মানুষ কি না করতে পারে!
প্রিয় পাঠক, বুঝতেই পারছেন ফিটনেস বা শরীরচর্চা একজন মানুষকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। আসুন দেখে আসি শরীরচর্চার এমন কিছু অজানা উপকারিতা যা আপনি আগে কখনো ভেবে দেখেননি।
১। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করেঃ ব্যায়াম নিয়ে আমাদের সাধারণ একটি ভাবনা হলো ব্যায়ামের/ শরীরচর্চার ফলে বাহ্যিক গঠন সুন্দর এবং সুঠাম হয়। কিংবা হার্ট ভালো থাকে। কিন্তু জেনে অবাক হবেন নিয়মিত ব্যায়াম শুধুমাত্র বাহ্যিক গঠন সুঠাম করতেই সীমাবদ্ধ নয়। এর প্রভাব আরো সুদূরপ্রসারী। গবেষণায় দেখা গিয়েছে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে নিয়মিত ব্যায়াম সহায়ক ভুমিকা পালন করে। এমনকি মানুষের মৃত্যুর হার কমিয়ে এনে দেয় অর্থাৎ দীর্ঘদিন সুস্থ দেহে বেঁচে থাকার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
২। ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ ভাবছেন “এ আবার কীভাবে সম্ভব!”। ক্যান্সারের মতন রোগব্যাধি যা কি না মানুষের জীবনের হুমকি হয়ে আবির্ভূত হয় এবং সহজে ধরা পড়ে না, তা ব্যায়ামের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়! জ্বি, ব্যাপারটি ঠিক তাই। ২৭টি কেইস সরাসরি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে বিভিন্ন ক্যান্সার যেমন- স্তন, কোলন ইত্যাদির ঝুঁকির পরিমাণ কমে যায় যদি কেউ নিয়মিত শরীরচর্চা করে থাকে।
৩। মস্তিষ্কের দক্ষতা বৃদ্ধিঃ ভাবতেই পারেন ব্যায়াম বা শরীরচর্চা তো করে হাত পা দিয়ে, এর সাথে আবার মস্তিষ্কের দক্ষতা বৃদ্ধি কীভাবে জড়িত! ব্যায়াম এবং মস্তিষ্কের দক্ষতা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করা হয়েছে যে আসলেই এদের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে কি না। দেখা গিয়েছে দৈনিক ৩০ মিনিট এরোবিক (Aerobic) ব্যায়াম ( দৌড়ানো, জগিং, সাঁতার, সাইক্লিং ইত্যাদি) করলে মানুষের মস্তিষ্কের উল্লেখযোগ্য হারে উন্নতি ঘটে। এরোবিক ব্যায়াম করে এমন শিক্ষার্থীদের মধ্যে গবেষণা করে দেখা গিয়েছে তাঁদের স্মৃতিধারণ ক্ষমতা, মনোযোগ, চৈতন্য বৃদ্ধি পেয়েছে, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে তারা অন্যদের চাইতে অনেক এগিয়ে রয়েছে এবং এখনকার সময়ে যেই রোগ কম-বেশি সবাইকেই আক্রমণ করে তাতেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। রোগটিকে ভুলে যাওয়া রোগ বলা যেতে পারে। তাই আপনার সন্তানের শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই এরোবেটিক ব্যায়ামে উৎসাহিত করুন। এতে করে তাঁর শিক্ষা জীবনে যেমন ভালো করার সম্ভাবনা থাকবে, পাশাপাশি সুস্বাস্থ্যও নিশ্চিত করা যাবে।
৪। বিষন্নতা দূর করেঃ আমাদের দেশে বিষন্নতা (depression) কে এখনো গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় না। কিন্তু ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা একজন মানুষকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এখানে আমি আমার জীবনের নিজ অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চা্ আমি গত পাঁচ বছর ধরে ব্যায়াম করছি এবং ব্যায়ামগারে বেশ কিছু সংখ্যাক মানুষকে দেখেছি মানসিক বিষন্নতা নিয়ে ব্যায়াম শুরু করে এবং কয়েক মাসের মধ্যে তাদের মধ্যে মানসিক সুস্থতা লক্ষ্য করা যায়। ব্যাপারটি আরো ভালো করে জানলাম যখন একটি গবেষণার ফলাফল দেখলাম। গবেষণায় বলা হয়েছে, ব্যায়াম বা যোগ-ব্যায়াম মানুষের জন্য এন্টি-ডিপ্রেশন হিসেবে কাজ করে। ২০১৫ সালের এই গবেষণায় এর প্রমান পেয়েছি এবং এই গবেষণায় কিছু গাইডলাইন ও দেয়া হয় ব্যায়ামকে এন্টি-ডিপ্রেশন হিসেবে কাজে লাগানোর জন্য।
৫। নারীর পিএমএস(Premenstrual syndrome) হ্রাস ঘটায়ঃ অনেক নারী পিএমএস সমস্যায় ভুগেন। তাদের ঋতুস্রাব হওয়ার এক-দুই সপ্তাহ আগেই হয়ে যায় যা তাঁকে মানসিকভাবেও সমস্যায় ফেলে। নিউজিল্যান্ডে ২ হাজার নারীর মধ্যে জরিপ করে দেখা গিয়েছে নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে পিএমএস এর সমস্যাটি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই যেসকল নারীর ঋতুস্রাব অনেক পূর্বে হয়ে যাচ্ছে তারা নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে তাদের এই সমস্যাটি কমিয়ে আনতে পারবেন।
দেখতেই পারছেন প্রিয় পাঠক, নিয়মিত শরীরচর্চা শরীর এবং মনের জন্য কীরকম উপকারী। একজন সুখী এবং সুস্থ মানুষ হওয়ার পেছনে সুস্বাস্থ্য পূর্বশর্ত। তবে শরীরচর্চা করার সময় অবশ্যই নিয়মমাফিক অনুসরণ করতে হবে। অনিয়মিত কিংবা অতিরিক্ত ব্যায়াম আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। তাই নিয়ম মেনে শরীরচর্চা করুন এবং সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সুফলগুলো ভোগ করুন। তাই তো প্রবাদে আছে, “স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল”।