প্রিয় পাঠকগণ আশা করি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন এবং করোনার বিস্তার প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাগুলো মেনে চলছেন। ইতোমধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের জন্যে সরকারীভাবে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে তবুও আমাদের কিছু চ্যালেঞ্জর সম্মুখীন হতে পারি। দেখা যেতে পারে কারো মাঝে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কিছু কিছু কিন্তু তাকে হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অথবা হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী করোনা টেস্ট এর সময় হয়নি কিন্তু কিছু লক্ষণ দেখা দিচ্ছে এবং হোম-কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে যেটি আমরা করতে পারি তা হলো নিজেরা কিছু বিষয় সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান নিয়ে নিবো এবং নিজ বাসায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা বা প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়ার চেষ্টা করবো। তেমনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একটি লক্ষণ হলো শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা ডিস্পনিয়া। আজকে ব্লগের এই পর্বে আমরা ঘরে বসে কিভাবে এর প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়া যেতে পারে সে বিষয়ে কিছু করণীয় দিক তুলে ধরবো।
ডিস্পনিয়া (Dyspnea) কী?
ডিস্পনিয়া বা শ্বাস নিতে কষ্ট (Shortness of Breath) হলো এমন একটি শারীরিক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি যখন ফুসফুস পর্যাপ্ত বাতাস পায় না বা একজন ব্যক্তি বাতাস গ্রহণ করতে পারেন না বা কষ্ট হয়। যাদের ফুসফুসে বা হৃদরোগ আছে তাদের এরকম সমস্যা হতে পারে। আর আমাদের বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে দেখা গিয়েছে এই লক্ষণ প্রকাশ পেতে।
এখন কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা উল্লেখ করা হবে।
১। বাঁকানো ঠোঁটে শ্বাসঃ
এই পদ্ধতিতে অনেক ক্ষেত্রে দ্রুত ফলাফল পেতে পারেন রোগী। এই পদ্ধতিতে ফুসফুসে আটকে থাকা বাতাস বের করে দিতেও সাহায্য করে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করার ধাপগুলো হলো-
- প্রথমে কাঁধ এবং ঘাড়ের মাংসপেশি শিথীল করতে হবে।
- এরপর মুখ বন্ধ রেখে নাক দিয়ে নিশ্বাস নিতে হবে আস্তে আস্তে এবং দুই পর্যন্ত গুনতে হবে।
- এরপর ঠোট বাকাতে হবে শিস বাজানোর ভঙ্গিতে
- এরপর আস্তে আস্তে এভাবে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়তে হবে এবং চার পর্যন্ত গুনতে হবে।
২। সামনে ঝুঁকে বসাঃ
চেয়ারে সামনে ঝুকে বসার মাধ্যমেও অনেক সময় শ্বাস নিতে কষ্ট হলে তা লাঘব করে। এই ক্ষেত্রে ধাপ হলো-
- প্রথমে আগের মতো ঘাড় এবং কাঁধ মাংসপেশি শিথীল রাখতে হবে। এরপর একটি চেয়ারে পায়ের পাতা মাটিতে সমান করে রাখতে বুক সামনে একটু ঝুকে বসতে হবে।
- হাতে কনুই দিয়ে পায়ের উপর ভর দিতে হবে এবং হাত দিয়ে গাল ধরা যেতে পারে। এরপর স্বাভাবিকভাবে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে হবে।
৩। Diaphragmatic Breathing:
এই পদ্ধতিটিতেও চেয়ারে বসতে হয় তবে এর প্রক্রিয়াটি একটু ভিন্ন। ধাপগুলো হলো-
- চেয়ারে বসে পা মাটিতে স্পর্শ করে মাথা, কাঁধ, ঘাড় শিথীল করে বসতে হবে।
- হাত পেটে স্থাপন করতে হবে।
- নাক দিয়ে শ্বাস নিতে হবে ধীরে ধীরে। এই সময় আপনি পেটের পেশীর প্রসারণ অনুভব করবেন।
- শ্বাস ছাড়ার ক্ষেত্রে ঠোঁট শিস বাজানোর মতো বাকা করে ছাড়তে হবে এবং একই সাথে পেটের মাংসপেশি শক্ত রাখতে হবে। শ্বাস নেয়ার থেকে ছাড়ার ক্ষেত্রে সময় বেশি নিতে হবে।
- এই প্রক্রিয়াটি ৫ মিনিট করুন।
৪। দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ানোঃ
দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে দেহ এবং শ্বাস-প্রশ্বাস শিথীল করতে সাহায্য করে। এ ক্ষেত্রে ধাপগুলো হলো-
- দেয়ালের কাছাকাছি উল্টো মুখে দাড়াতে হবে এবং দেহের পশ্চাৎদেশ (hip) দেয়ালে ঠেস দিতে হবে।
- কাঁধ এবং পা ছড়িয়ে দাঁড়াতে হবে এবং উরুর উপর হাত রাখতে হবে।
- এরপর কাঁধ শিথীল করে একটু সামনে ঝুকে হাত দুটো ঝুলাতে হবে।
তাছাড়া আরো একটি পদ্ধতি আছে টেবিলের/ ফার্নিচারের ওপর হাত রেখে সামনে ঝুকে ঘাড় শিথীল করে দাঁড়ানো। এ ক্ষেত্রেও শ্বাস নেয়ার কষ্ট লাঘব হয়।
৫। ঘুমানোর ক্ষেত্রে শিথীলতাঃ
ঘুমানোর সময়ও দেখা যায় যে শ্বাস নিতে কষ্ট হলে ঠিক মতন ঘুম হয় না বা কষ্ট হয়। এ ক্ষেত্রে ঘুমের সময় পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে উঁচু করে রাখতে হবে যাতে পায়ের হাঁটু ভাজ হয়ে থাকে। এতে করে শ্বাস প্রশ্বাসের যে অসুবিধা সেটি লাঘব হবে এবং পুরো শরীর শিথীল হবে ঘুমের জন্যে।
৬। ফ্যান এর ব্যবহারঃ
হ্যান্ডি যে ফ্যানগুলো আছে সেগুলো ডিস্পনিয়ার জন্যে কার্যকরী বলে গবেষণায় দেখা গিয়েছে। যাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয় তাঁরা নাক/মুখের কাছে ফ্যান দিলে বাতাসের বেগের কারনে ফুসফুসে বাতাস প্রবেশ করে এবং শ্বাস প্রশ্বাস ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
৭। ধোয়ার শ্বাস নেয়াঃ
এই পদ্ধতির ধাপগুলো হচ্ছে-
- এক বোল ধোয়া ওঠা গরম পানি নিতে হবে এবং মেন্থল দিতে হবে।
- এরপর মাথায় তোয়ালে দিয়ে পানির ধোয়া নিতে নিতে নাক দিয়ে।
৮। কফি এবং আদাঃ
বাসায় এই দুইটি জিনিশ অনেকেরই আছে। হাতের কাছে দৈনন্দিন এই দুইটি উপাদান শ্বাস প্রশ্বাস ঠিক রাখতে সাহায্য করে। কফির ক্ষেত্রে ব্ল্যাক কফি সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। এর ক্যাফাইন অনেক সময় শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়াটি ঠিক রাখতে সাহায্য করে। আর আদার ক্ষেত্রে কাচা আদা বা গরম পানির সাথে আদা দুভাবেই গ্রহণ করা যায়। আদাও মানুষের শ্বাস নেয়ার কষ্ট লাঘবে সাহায্য করে।
পাঠকগণ মনে রাখতে হবে এই পদ্ধতিগুলো প্রাথমিক চিকিৎসা। করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে যে নিয়মাবলী রয়েছে সে নিয়মগুলো কঠোরভাবে পালন করতে হবে। এই প্রক্রিয়াগুলো রোগী নিজে থেকেই করতে পারবেন। মনে রাখতে হবে তিনি যেহেতু সন্দেহ করছেন তাঁর করোনা হতে পারে সে ক্ষেত্রে সে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলবে এবং অন্যান্য বিধিনিষেধ মেনে চলবে। নিজেরা সচেতন হউন এবং অন্যদেরও সচেতন করুন।